অসমাপ্ত প্রেম
অসমাপ্ত প্রেম
রিন্টু সাহা
না! তারপর, সেইদিন থেকে আর
কথা হয়নি কোন আমাদের।
সে বলেছিল
তাদের বাড়ি আর যেন না আসি,
শুনে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলাম বুকে।
সেই ব্যথা কাঁটিয়ে উঠতে পারিনি আজো!
তাই আমিও আর যাইনি।
ওই দিনের পর বেশ কয়েকবার
দেখা হয়েছিল, কলেজে পড়াকালীন।
কখনো আর কথা বলতে পারিনি আমি!
তাকে দেখলে বুকটা খা খা করত।
অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা অনুভব করতাম।
খুব কাছাকাছি হয়ে যেতাম যখন দু-এক দিন।
নিজের উপর আর নিজের আয়ত্ব থাকত না।
ভাবতাম, এই বুঝি কি সব করে বসবো!
কিছুই করা হয়নি, তাও কোনদিনই!
আশায় থাকতাম, ও নিজে থেকেই একদিন _
আবার কথা বলা শুরু করবে...
কিন্তু করে নি আর,
আজো...
চোদ্দ বছর কেটে গেল মাঝে _
প্রেম শুরু হবার আগে
খুব ভালো বন্ধু ছিলাম
আমরা দুজনে।
সেই বন্ধুত্বটাও মিস করি অনেক!
আমাদের বিচ্ছেদের তিন বছর পর ওর বিয়ে হয়।
বাড়ির দেখা ছেলের সাথেই হয়েছে মনে হয়!
জানিনা সঠিক।
সেই খোঁজ নেবার উৎসাহ পাইনি, কোনদিনই মন থেকে।
বিয়ের কয়েক বছর পর
দেখা হয়েছিল, ওর সাথে স্টেশনে।
দূর থেকে দেখেছি ওকে,
সেও নিশ্চিত দেখেছিল।
তাকাতে পারিনি মুখের দিকে!
চলে গেছি সেখান থেকে,
বুকে পাথর চেপে।
ওই পথ যেন সামনে এগোতেই চায়নি...
মনে হচ্ছিল আমার পৃথিবী পিছনে ফেলে,
সামনে কোন অজানায় এগোচ্ছি আমি।
তারপর কয়েক বছর কেটে গেছে...
একদিন ট্রেনে করে ফিরছি,
মোবাইল অ্যাপে কবিতা পড়ছিলাম,
একমনে বহুক্ষণ ধরে।
কামরা একটু ফাঁকা হতে,
মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকাই সামনে।
আমার থেকে তিন চারটে সিট পর
দেখি, ছোট্ট এক চার পাঁচ বছরের বাচ্চা
তার মায়ের গলা জড়িয়ে বসে আছে,
পাশে বাবাও।
সেদিন ওই বাচ্চার মা কে চিনতে অসুবিধা হয়নি।
কয়েক পলক দেখার পর আর চোখ তুলতে পারিনি!
সে আমাকে দেখছিল কিনা জানিনা...
পরের কয়েকটা স্টেশনের পথ _
ওই ট্রেনের কামরায় বসে,
আমার কেমন কেটেছিল!
শুধু প্রেমিক হৃদয় ই জানে...
ট্রেন থামতেই নেমে যাই, বাড়ির স্টেশনে পৌঁছে।
সেও একই স্টেশনে নামে।
ছেলে স্বামী কে নিয়ে,
বাপের বাড়ি এসেছে বেড়াতে।
অদ্ভুত ব্যাপার মেয়েদের!
যে বাড়িতে জন্মায়, বড় হয়…
সবকিছুই যেই বাড়িতে,
বিয়ের পর সেটাই, বাপের বাড়ি হয়ে যায়।
বাড়িতে আসা টা কে বেড়াতে আসা বলে।
একদিন ওটাই ওর নিজের বাড়ি ছিল।
চিরকাল ই তাই থাকবে।
হয়তো এমন ভেবে,
আমায় যেতে বারন করেছিল।
কথা রেখেছি, যাইনি আর
কোনদিনই।
তারপরও কেটে গেছে আরো কয়েক বছর,
ট্রেনে শেষ দেখার পর।
ওর স্বামীর পদবী জানিনা।
জানতে চাইনিও কারো কাছে।
সে কারনেই হয়তো,
সামাজিক কোনো মাধ্যমেই খুঁজে পাইনি ওকে।
মাঝে মাঝে অনেকদিন, বছর পর
হঠাৎ করে খুঁজি,
ফেইসবুকে।
পাইনা, পাইনি এখনো!
কারো সাহায্য নিতেও সায় দেয়নি মন।
কোনো মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ডের প্রফাইল এও দেখিনি ওকে।
হয়তো, সামাজিক কোনো মাধ্যমে নেই ও।
কিন্তু কেন নেই?
নিজের ইচ্ছাতেই নেই?
নাকি স্বামী শ্বশুর বাড়ির চাপ?
কে জানে! কি কারণ…
যদি থেকেও থাকে, আর
কোনদিন খুঁজেও পাই,
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা অন্তত মেসেজ
করার সাহস সঞ্চয় করতে পারব কিনা জানিনা!
ওর জন্য মনে যে প্রেম ছিল,
একি রকম রয়েছে আজো!
প্রেমের আগের বন্ধুত্বটাও হারায়নি একটুও…
হারিয়ে গেছে সময়!
পনেরো তে পরলো এবছর।
আমার আর বিয়ে করা হয়নি!
কেন জানিনা,
একদিন হয়তো হবে!
ওর অভাব জীবনে আছে নিশ্চিত।
মনে কিন্তু ও সবসময়ই রয়ে গেছে…
কিসের মায়ার বাঁধনে,
যে জড়িয়ে ছিল হৃদয়!
ভিন্ন পথে বেঁকে গেছে জীবনরেখা,
তবু ছিন্ন করতে পারলাম না আজো…
Comments
Post a Comment